সীতাকুণ্ডের চৌধুরীঘাটা এলাকায় আবুল খায়ের স্টিল মিল থেকে লুট হওয়া তামা উদ্ধার করা হয়েছে ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড এলাকায় পরিত্যক্ত রাষ্ট্রীয় কেমিক্যাল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স (সিসিসি) নামের কারখানায় একদল দুর্বৃত্ত একনলা বন্দুক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে নিরস্ত্র দুই আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহত দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর আনসার সদস্যরা অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি তুলেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা আনসার কমান্ডার মো. আবু সোলাইমান বলেন, চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের ঘটনায় ওমর ফারুক ও লুলু মিয়া নামের দুই আনসার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কারখানায় কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানাটির ভেতরে তাঁদের ক্যাম্প আছে। সেই ক্যাম্পে ২৫ জন আনসার সদস্য কর্মরত। তাঁরা পালা করে কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করেন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে শতাধিক দুর্বৃত্ত কারখানার ভেতরে ঢুকে লোহার যন্ত্রপাতি লুট করতে শুরু করে। তাঁরা বাধা দিলে অন্তত আটজনকে বেঁধে মারধর শুরু করে। এ সময় দুজন আনসার সদস্য রক্তাক্ত হয়েছেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালিয়ে আনসার সদস্যদের উদ্ধার করেন।
গত মাসে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চৌধুরীঘাটা এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুপের এ কে এস স্টিল মিল নামের লোহা তৈরির কারখানার স্ক্র্যাপের ডিপোতে চারবার হামলা চালিয়ে লোহা, তামা ও পিতল লুট করে দুর্বৃত্তরা। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের মারধর করার ঘটনাও ঘটে।
কারখানাটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইমরুল কাদের ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডে তাঁদের ২টি কারখানায় ১০০ আনসার সদস্য নিয়োজিত। এক মাস ধরে আনসার সদস্যদের অস্ত্র না থাকার বিষয়টি দুর্বৃত্তরা জেনে গেছে। এর ফলে আনসার সদস্যদের পাত্তা দিচ্ছে না দুর্বৃত্তরা। গত মাসে তাঁদের স্ক্র্যাপ ডিপো থেকে কয়েক দফা মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁদের স্থানীয় নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ে লুট করা কিছু মালামাল উদ্ধার করেছেন। তিনি আরও বলেন, আনসার সদস্যদের হাতে অস্ত্র না থাকায় এমন সাহস করেছে দুর্বৃত্তরা। আনসার সদস্যের হাতে দ্রুত অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। যত দিন আনসার সদস্যদের হাতে অস্ত্র ফেরত না আসবে, তত দিন কারখানাগুলো নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা আনসার কমান্ডার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে মোট ১৬০টি ছোট-বড় কারখানা আছে। এর মধ্যে ৪০টি কারখানায় ৬০০ জন আনসার সদস্য কর্মরত। গত ২৫ আগস্ট আনসার সদস্যদের দাবিদাওয়া নিয়ে ঢাকায় সচিবালয়ের সামনে বাহিনীটির একাংশ বিদ্রোহ করে। পরে ২৯ আগস্ট সারা দেশের আনসার সদস্যদের কাছ থেকে তাঁদের নামে বরাদ্দ করা অস্ত্র প্রত্যাহার করা হয়। সেই থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনায় নিরস্ত্রভাবে দায়িত্বপালন করছেন আনসার সদস্যরা।
আজ শনিবার সকালে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের পরীর রাস্তা এলাকায় একটি কারখানার মূল ফটকে দায়িত্বপালন করছিলেন দুজন আনসার সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের হাতে যখন অস্ত্র ছিল, তখন টাউট–বাটপার লোকজন কথা বলতে ভয় পেত। এখন আর ভয় পায় না। বরং কোনো বিষয়ে তাঁরা ব্যবস্থা নেওয়া চেষ্টা করলে উল্টো হামলা করার চেষ্টা করে। রাতের বেলা ঝুঁকিটা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু অস্ত্র থাকলে ভয়ে কাছে আসতে চায় না দুর্বৃত্তরা।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স ছাড়া কোথাও হামলা হওয়ার খবর তাঁর কাছে নেই। এ বিষয়ে কেউ সীতাকুণ্ড থানায় মামলাও করেননি।
ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদে ১০ জন আনসার সদস্যের জন্য ৬টি অস্ত্র দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে দুটি অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র ছাড়া বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বপালন করলে দুর্বৃত্তদের সামনে তাঁদের মনোবল থাকবে না। এর ফলে তাঁদের হাতে অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি। রাসায়নিক কারখানায় হামলার ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। রাতভর পুলিশের সঙ্গে থেকে আনসার সদস্যদের উদ্ধার ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়েছে।
জেলা আনসার কমান্ডার মো. আবু সোলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, আনসার সদস্যদের হাতে অস্ত্র ফেরত দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে গুরুত্ব অনুসারে আনসার সদস্যদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।
Leave a Reply